মোটরসাইকেল খবর

সাইকেলের দামে মোটরসাইকেল দিচ্ছে রানার


ভালো মানের একটি সাইকেল কিনতে আপনাকে কমছে কম হাজার পঞ্চাশেক টাকা খরচ করতে হবে। আর সাইকেলটি যদি হয় ট্রেক, জিটি কিংবা প্রো-বাইক কোম্পানির তবে দাম লাখ খানেক ছাড়াবে। কারণ এসব সাইকেলের ফ্রেম অ্যালুমিনিয়াম কিংবা কার্বন ফাইবারের তৈরি। সঙ্গে রয়েছে শিমানোর অত্যাধুনিক গিয়ার ইকুইপমেন্ট। তাই দামটাও চড়া। আপনি যদি সাইকেলে দামে মোটরসাইকেল কিনতে চান তবে আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের তৈরি আরটি মডেলের বাইক। কেননা, এর দাম মাত্র ৬৪ হাজার টাকা। বাইকটি সহজ কিস্তিতেও কেনার সুযোগ রয়েছে।

সাইকেলের দামে রানার দিচ্ছে মোটরসাইকেল

রানার অটোমোবাইলসের নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রথম বাইক ছিল দুরন্ত। সাশ্রয়ী দামের এই বাইকটি দেদারসে বিক্রি হয়। কিন্তু বাইকটির বেশ কিছু অপূর্ণতা ছিল। বিশেষ করে দুরন্তের চাকা ছিল স্পোকের। এতে সেলফ স্টার্টার ছিল না। ছিল না বাম্পার ও শাড়ি গার্ড। বাইকটিতে ফুয়েল ইন্ডিকেটরও অনুপস্থিত ছিল। বাইকটির বড় সমস্যা ছিল এর ওয়্যারিংয়ে। বৃষ্টির দিনে বাইকটি ভিজলে স্টার্ট দিতে বেগ পেতে হত। এছাড়াও দুরন্তের ফুয়েল ট্যাঙ্কের ঢাকনা দিয়ে অয়েল লিকেজ হত। এসব সমস্যার কারণে রানার দুরন্তের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুরন্তের মত দেখতে বাজারে এনেছে আরটি মডেলের বাইক।

সাইকেলের দামে রানার দিচ্ছে মোটরসাইকেল

বাইকটিকে সামনে থেকে দেখলে দুরন্তই মনে হবে। কেননা, আরটির হেডলাইট দুরন্তর মতই। দুরন্ততে যেসব ঘাটতি ছিল সেগুলো পূরণ করে নতুন ডিজাইনে বাজারে ছাড়া হয়েছে আরটি।

বাইকটিতে রয়েছে অ্যালয় হুইল, সেলফ স্টার্টার এবং ফুয়েল ইন্ডিকেটর। এতে আরামদায়ক সিট ব্যবহার করা হয়েছে। দুরন্তের চেয়ে আরটির সিট প্রশস্ত। রয়েছে গ্রাব রেইল সমৃদ্ধ কেরিয়ার। যা বাইকটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। ফুয়েল ট্যাংকের দুপাশে ব্যবহার করা হয়েছে মাসকুলার কিট। ফলে বাইকটিকে স্পোর্টি লুক খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ইঞ্জিন গার্ড। ফলে সাশ্রয়ী দামের আদর্শ বাইক রানার আরটি।

বিশেষ ফিচার হিসেবে আরটিতে রয়েছে মোবাইল ফোন চার্জ দেবার সুবিধা। আকর্ষণীয় করে এই চার্জার ডক তৈরি করা হয়েছে। ডকটিকে পানিরোধী করার জন্য রয়েছে প্লাস্টিকের ঢাকনা।

সাইকেলের দামে রানার দিচ্ছে মোটরসাইকেল

রানারের দুরন্তে ব্যবহার করা হয়েছিল ৮২.২ সিসির ইঞ্জিন। কিন্তু রানার আরটিতে রয়েছে ৮৬ সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪ স্ট্রোক এয়ার কুলড পেট্রোল ইঞ্জিন। ফলে দুরন্তের চেয়েও আরটির গতি বেশি হবে।

আরটির ম্যাক্স পাওয়ার ৫.৯ বিএইচপি @৭৫০০ আরপিএম। ম্যাক্স টর্ক ৫.৫ এনএম @ ৪৫০০ আরপিএম। সিডিআই ইগনিশন সমৃদ্ধ বাইকটিতে কিক ও ইলেকট্রিক স্টার্টার রয়েছে।
যদিও এর ফ্রন্ট ও রিয়ারে ড্রাম ব্রেক রয়েছে। সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করলে এর ব্রেকিং পারফরমেন্স আরও ভালো পাওয়া যেত। সেক্ষেত্রে অবশ্য দামটাও বেড়ে যেত।

দুরন্তের ফুয়েল ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ছিল ৭.৫ লিটার। অন্যদিকে আরটিতে আছে ৮ লিটারের মাসকুলার ফুয়েল ট্যাক্স। রিজার্ভ ট্যাংকে থাকবে এ লিটার ফুয়েল। ফুয়েল ট্যাংকটি ডায়নামিক গ্রাফিক্স ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে।

এর ফ্রন্ট টায়ার সাইজ ২.৫০-১৭, রিয়ার টায়ার সাইজ ২.৭৫-১৭। দুরন্তেও এই একই সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে আরটিতে ভালো ব্রেকিং পারফরমেন্স আশা করা যায় না। কেননা, ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে দুরন্তের পেছনের ব্রেক ধরলে চাকা পিছলে যেত। ধারণা করা হচ্ছে আরটির চাকাও পিছলে যাবে। সেক্ষেত্রে ফ্রন্ট ও রিয়ার ব্রেক একসঙ্গে ধরলে দ্রুতই বাইকটিকে বাগে আনা যাবে। রানার চাইলে বাইকটির দু চাকায় মোটা টায়ার ব্যবহার করতে পারত। সেক্ষেত্রে কন্ট্রোলিং আরও ভালো হতো।

দুরন্তের চেয়ে আরটির ওজন বেশি। দুরন্তের ওজন ছিল ৭৪.৫ কিলোগ্রাম। আর আরটির ওজন ৮৬ কিলোগ্রাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওজন কম হলেও দুরন্তের গতি ৬০ থেকে ৮০ ওঠালেও বাইকটির ব্যালেন্স রাখা যায় অনায়াসে। তবে প্রচন্ড কাঁপে। আপনি যদি পেছনে ৫০-৭০ কেজি ওজনের আরোহী নিয়ে বাইক চালান তবে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতি তুলতে পারবেন। সঙ্গে কন্ট্রোলিং হবে আরামসে।
অনেকে বলেন ৮০ সিসির বাইকে প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতি তোলা যায় না। কেউবা অভিযোগ করেন দুরন্ত নিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠা যায় না। কিন্তু এসব অভিযোগ সত্যি নয়। দুরন্ত মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, তাদের বাইক নিয়ে হাইওয়েতে সর্বোচ্চ প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতি পেয়েছেন। আশা করা যায় আরটির গতি আরও বেশি হবে।
অন্যদিকে দুরন্ত দুইজন আরোহীসহ অনায়াসেই ফ্লাইওভারে ওঠে যায়। যেকোনো একশ সিসির বাইকের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম। দুরন্তের থ্রটল রেসপন্স ভালো ছিল। সেই হিসাবে বলা যায় আরটিতেও ভালো রেডি পিকআপ পাওয়া যাবে।

দুরন্তের জ্ঞাতি ভাই আরটির দৈর্ঘ্য ১৪৪০ মিলিমিটার।, প্রস্থ ৭৯৫ মিলিমিটার, উচ্চতা ১২১০ মিলিমিটার, হুইল ব্যাস ১২০০ মিলিমিটার। এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সও ভালো। ১৫০ মিলিমিটার।

দুরন্তের ফ্রন্ট ও রিয়ার সাসপেনশন কিছুটা নিম্ন মানের ছিল। কিন্তু আরটিতে উন্নত মানের ফ্রন্ট ও রিয়ার সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এবড়োখেবড়ো সড়কেও এটি চালক ও আরোহীকে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে।

দুরন্ত যখন বাজারে আসে তখন রানার দাবি করেছিল এই বাইক হবে মাইলেজ কিং। এতে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার মাইলেজ পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে হাইওয়েতে ৫০ কিলিমিটার এবং শহরে ৪০-৪৫ কিলোমিটার মাইলেজ পাওয়া গেছে।

রানার দাবি করছে তাদের এন্টি লেভেলের বাইক আরটিতে হাইওয়েতে মাইলেজ পাওয়া যাবে ৮০ কিলোমিটার। শহরে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার কমতে পারে। এখন দেখার বিষয় ব্যবহারকারীরা এটি চালিয়ে কত মাইলেজ পান।

রানার আরটি নিয়ে কথা হয় রানার অটোমোবাইলসের বিক্রয় বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. ওবায়দুল ইসলাম রনির সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘রানার সাইকেলের বিকল্প হিসেবে বাজারে এনেছে সাশ্রয়ী দামের বাইক আরটি। দুরন্ত মোটরসাইকেলেটিতে যেসব ঘাটতি ছিল সেসব ঘাটতি পূরণ করে আরটিকে ডিজাইন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের বাহন হিসেবে আরটি মডেলের বাইকটিকে বাজারজাত করছে রানার।’

তবে দুরন্তের মতই আরটিতে বাম্পার, শাড়ি গার্ড নেই। নেই ডিস্ক ব্রেকও। তবে এই বাইকটিতে দুরন্তের মতই গিয়ার ইন্ডিকেটর রয়েছে। যারা রানার আরটি দিয়ে বাইকে হাতেখড়ি দেবেন তাদের জন্য এই গিয়ার ইন্ডিকেটর বাড়তি সুবিধা দেবে।

রানার আরটি বাইকটির সঙ্গে উপহার হিসাবে একটি আকর্ষণীয় উইন্টার জ্যাকেট দেয়া হচ্ছে। বাইকটিতে ৬০০ মিলিলিটার ইঞ্জিন ওয়েল এবং দুই লিটার পেট্রোল ভরে দেয়া রয়েছে।

জিরো ডাউন পেমেন্টে রানারের এই বাইকটি কেনার সুযোগ রয়েছে। সর্বোচ্চ ৩০ মাসের কিস্তি সুবিধা নেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে মূল দামের সঙ্গে ১.৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button